.চল্লিশ হাদীস-
১. নবী করীম
(সা.) বলেন, সমস্ত ভালো কাজের ফলাফল, নিয়তের ওপর নির্ভর করে। (সহীহ বুখারী ও
মুসলিম) অর্থাৎ ভালো কাজ ভালো বলে গন্য হবে, যখন তা ভালো নিয়তে করা হবে। কাজ ভালো
কিন্তু নিয়ত খারাপ তাহলে তা আল্লাহর দরবারে ভালো কাজ বলে বিবেচ্য হবে না। মোটকথা,
আল্লাহ তায়ালা কাজের বাহ্যিক দিক দেখার সঙ্গে সঙ্গে অভ্যন্তরীণ দিকটিও দেখেন।
২. কবীরা গুনাহ
হলো, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, অন্যায়ভাবে কাউকে
হত্যা করা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। (সহীহ বুখারী)
৩. নবী করীম
(সা.) বলেন, সাতটি ধ্বংসাত্মক গোনাহ থেকে বেঁচে থেকো। সাহাবাগণ আরজ করলেন, সেই
সাতটি ধ্বংসাত্মক গোনাহ কী কী (যা মানুষকে ধ্বংস করে দেয়)? উত্তরে তিনি বললেন,
শিরক করা, জাদু করা, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, ইয়াতিমের মাল গ্রাস
করা, জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা ও সত্বি-সাধবা নারীর ওপর মিথ্যা অপবাদ দেওয়া।
(সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
৪. মুনাফিকের
আলামত তিনটি : মিথ্যা বলা, ওয়াদা ভঙ্গ করা ও আমানতের খিয়ানত করা। (সহীহ বুখারী ও
মুসলিম)
৫. তোমাদের
মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি যে কোরআন মজীদ শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়। (সহীহ
বুখারী)
৬. আল্লাহর কাছে
সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো, যা নিয়মিত হয়, যদিও তা অল্প। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
৭. রাসূল (সা.)
ইরশাদ করেন, আমি সর্বশেষ নবী, আমার পরে আর কোনো নবী জন্ম নিবে না। (সহীহ বুখারী ও
মুসলিম)
৮. পবিত্রতা
ঈমানের অর্ধেক। (সহীহ মুসলিম) ব্যক্তির পবিত্রতা, ফেরেস্তাদের সঙ্গে সাদৃশ্য রাখে।
কেননা ফেরেস্তারা সর্বক্ষণ পবিত্র অবস্থায় থাকে। আর অপবিত্রতা, শয়তানের সঙ্গ
সাদৃশ্য রাখে। তাই দেখা যায, পবিত্র ব্যক্তি উর্ধ্ব জগতের অনেক কিছু লাভ করতে
পারে। আর অপবিত্র ব্যক্তি শয়তানের ওসওয়াসার শিকার হয়; জুলমত তাকে চার পাশ থেকে
ঘিরে ধরে। তাই ইসলামে পবিত্রতাকে এত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা,
মায়ারিফুল হাদীসের সূত্রে, খন্ড-৩ পৃষ্ঠা-২৫)
৯. রাসূল (সা.)
বলেন, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় জায়গা মসজিদ। (সহীহ মুসলিম)
১০. যে ব্যক্তি
আমার ওপর একবার দুরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার ওপর দশটি রহমত বর্ষন করবেন।
(সহীহ মুসলিম)
১১. রাসূল (সা.)
বলেন, মুমিন এক গর্তে দুইবার দংশিত হয় না। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম) অর্থাৎ মুমিনের
বৈশিষ্ট্য হলো চালাক হওয়া, প্রতারক নয়; সহজ-সরল হওয়া তবে নির্বোধ নয়।
১২. রাসূল
(সা.). বলেন, মল্লযুদ্ধে কেউ কাউকে হারিয়ে দেওয়া বাহাদুরি নয়। বরং প্রকৃত
বাহাদুরতো হলেন ঐ ব্যক্তি যে ক্রোধের সময়ও নিজকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে। (সহীহ
বুখারী ও মুসলিম) উক্ত হাদীসে রাগকে নিয়ন্ত্রনের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
১৩. এক
মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের পাঁচটি হক রয়েছে: সালামের উত্তর দেওয়া, অসুস্থ হলে
দেখতে যাওয়া, মারা গেলে জানাযায় শরীক হওয়া, দাওয়াত দিলে কবুল করা ও হাচির জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
১৪. যে মানুষের
ওপর দয়া দেখায় না আল্লাহ তার ওপর রহম করেন না। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
১৫. মানুষের ওপর
জুলুম-নির্যাতন, কিয়াতমের দিন অন্ধকার রূপ ধারণ করবে। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
১৬. নবী করীম
(সা.) বলেন, দুমুখো আদমী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
১৭ .তুমি
দুনিয়াত বসবাস করো মুসাফির বা পথিকের ন্যায়। (সহীহ বুখারী)
১৮. আত্মীয়তার
সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে যেতে পারবে না। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
১৯. রোজা রেখে,
যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও তার ওপর আমল না ছাড়ে, তো আল্লাহ তায়ালার কাছে, ঐ ব্যক্তির
পানাহার ছাড়ার কোনো কদর নেই। (সহীহ বুখারী)
২০. কোনো
ব্যক্তি মিথ্যুক হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ঠ যে, কোনো কিছু শুনে, যাচাই বাচাই না
করে, তা অন্যের কাছে বলে দেয়া। (সহীহ মুসলিম) বর্তমানে হাওয়ায় কত সংবাদ ভেসে
বেড়ায়। হুজুগে, সেই সংবাদের ভিত্তিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে ফেলি বা প্রস্তুতি চলে।
পরে শুনা যায় তেমন কিছুই না। রাসূল (সা.) এর এই হাদীসের শিক্ষা আমাদের মাঝে থাকলে
বহু ফেতনা কমে যেতো।
২১. যে ব্যক্তির
অনিষ্টতা থেকে প্রতিবেশি নিরাপদ নয়, সে জান্নাতে যেতে পারবে না। (সহীহ বুখারী ও
মুসলিম)
২২. রাসূল (সা.)
বলেন, তোমাদের মধ্যে আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয় ঐ ব্যক্তি, যার চরিত্র সুন্দর।
(সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
২৩. দান-সদকা
দ্বারা মাল কমবে না। যে ব্যক্তি অন্যের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে, আল্লাহ তায়ালা তার
সম্মান বাড়িয়ে দেন। আর যে ব্যক্তি আল্লার জন্য নিচু হয়, আল্লাহ তায়ালা তার মাকাম
উঁচু করে দেন। (সহীহ মুসলিম)
২৪.
পরিবার-পরিজনের জন্য মাল খরচ করলেও সদকার ছওয়ার লাভ হয়। (সহীহ বুখারী ও
মুসলিম)
২৫. নবী করিম
(সা.) একবার যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যে যুবক বিবাহের
সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে নেয়। কেননা, এর দ্বারা নজর এবং লজ্জাস্থানের
হেফাজত হয়। আর যার সামর্থ্য নেই তার কর্তব্য হলো রোজা রাখা। কারণ, রোজা দ্বারা
নফসের কামনা কমে আসে। (সহীহ বুখারী)
২৬. চার বিষয়
দেখে সাধারণত বিবাহ করা হয়- মাল, বংশ, সুন্দর্য ও দ্বীনদারী। তোমরা দ্বীনদারীকে
প্রাধান্য দিও। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
২৭. রাসূল (সা.)
বলেন, আমি তোমাদের দারিদ্রতা নিয়ে পেরেশানি করি না। আমার আশংকা তোমাদের ধনাঢ্যতা
নিয়ে। কারণ, সম্পদের প্রবাহ শুরু হলে আর তোমরা এর পিছনে পড়ে যাবে। তারপর এই সম্পদ
পূর্ববর্তীদের যেমন ধ্বংস করেছিলো, তেমনিভাবে তোমাদেরও ধ্বংস করে দিবে। (সহীহ
মুসলিম)
২৮. যখন আমানতের
খেয়ানত শুরু হবে তখন কেয়ামতের অপেক্ষা করতে থেকো। (সহীহ মুসলিম)
২৯. যে ব্যক্তি
হারাম ভক্ষণ করে, পরিধান করে, তার দোয়া কিভাবে কবুল হবে?
৩০.বিধবা ও
ইয়াতীমকে সাহায্যকারী, আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদের ন্যায় সওয়াব লাভ করবে।(সহীহ
বুখারী ও মুসলিম)
৩১. দুর্বলদের
বদৌলতে তোমাদেরকে রিজিক দেওয়া হয়, সাহায্য আসে।
৩২.খাও, পান
করো, পরিধান করো, সদকা করো কিন্তু অপচয় ও অহংকার করো না। (সহীহ বুখারী)
৩৩. দুই
ব্যক্তির ওপর ঈর্ষা হতে পারে। ১. যে ব্যক্তি সম্পদের মালিক হয়ে, তা আল্লাহর
রাস্তায় খরচ করার তাওফীক পায়। ২. যাকে আল্লাহ তায়ালা জ্ঞান দিয়েছেন, আর সে তা
দ্বারা বিবাদ মিটায় ও অন্যকে শিক্ষা দেয়। (সহীহ বুখারী)
৩৪. পরস্পর
হৃদ্যতা আর ভালোবাসায়, মুমিনের দৃষ্টান্ত এক দেহের ন্যায়। দেহের কোনো অঙ্গ অসুস্থ
হলে, সমবেদনায় অন্য সকল অঙ্গ জ্বর ও ব্যথায় রাত জাগে। (সহীহ মুসলিম)
৩৫. প্রকৃত
মুসলমান ওই ব্যক্তি, যার হাত ও জবান থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে। (সহীহ বুখারী)
৩৬. প্রত্যেকটি
কাজ সুন্দরভাবে সমাধান করা উচিত। অতএব কাউকে (শরয়ী দণ্ডবিধির কারণে) হত্যা করতে
হলে সুন্দরভাবে করো। কোনো প্রাণী জবাই করতে হলে সুন্দরভাবে করো। তোমাদের উচিত
জবাহের আগে ছুরি ধার করা এবং পশুকে অত্যাধিক কষ্ট থেকে রেহাই দেয়া। (সহীহ মুসলিম)
৩৭. তোমাদের কেউ
মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না, নিজের জন্য যা পছন্দ করো, অন্যের জন্য তা পছন্দ
করো। (বুখারী)
৩৮. লজ্জা
ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ শাখা। (বুখারী)
৩৯. মুসলমানকে
গালি দেওয়া কবীরা গুনাহ আর তাকে হত্যা করা কুফুরী। (বুখারী)
৪০. যে ব্যক্তি
প্রতিদিন সকালে সাতটি ‘আজওয়া খেজুর’ খাবে ওই দিন বিষ বা জাদু তার কোনো ক্ষতি
করতে পারবে না। (বুখারী)
No comments:
Post a Comment
Your comments...our inspiration ... thanks!